খাওয়ার পর যেসব মারাত্মক ভুল আমরা করে থাকি

খাওয়া

খাওয়ার সময়

প্রতিদিন ২ বা ৩ বার খাওয়ার পরে আমরা বেশকিছু মারাত্মক ভুল করে থাকি। এসব ভুলের মধ্যে খুবই ক্ষতিকর হলো খাওয়া শেষ হতে না হতেই প্রচুর পরিমাণে পানি পান ও বিছানায় গা এলিয়ে শুয়ে পড়া। এসব অভ্যাস হজমের জন্য খুবই ক্ষতিকর।

খাওয়ার পরে আমাদের আরেকটি মারাত্মক ভুল হলো ফল খাওয়া। যদিও ফলমূল শরীরের জন্য বেশ উপকারী। কিন্তু ভুলেও তা খাওয়ার পরপরই কখনো খাওয়া যাবে না। ফল খাওয়ার সবচেয়ে উপযুক্ত সময় ভারী খাবার খাওয়ার কমপক্ষে ২ ঘন্টা আগে বা পরে। কারণ ফল দ্রুত হজম হয়, ফলে ভারী খাবার খাওয়ার পরপরই ফল খেলে প্রচুর গ্যাস হয় এবং শরীরে সুগার লেবেল বেড়ে যায়।

খাওয়ার পরপরই চা খাওয়া অনেকেরই অভ্যাস। বিশেষত দুধ চা। এটি দেহের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। কারণ চা পাতায় রয়েছে উচ্চ এসিডিটি। আমরা যদি আমিষ গ্রহণের পরপরই নিয়মিত দুধ চা পান করি, তাহলে চায়ের এসিডিটি আমিষকে শক্ত করে। ফলে হজম হওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। তাই খাওয়ার কমপক্ষে ১ কিংবা ২ ঘন্টা পরে চা খাওয়া উচিত।

অনেককেই দেখা যায়, খাওয়ার পরপরই কিংবা খাওয়ার মাঝে প্রচুর পানি পান করে। সুস্পষ্টত যখন আমার খাবার সাথে সাথে পানি পান করি, তখন সব ধরণের পাচক রস পাকস্থলীতে জমা হয়; এমনকি তাদের সাথে হাইড্রোক্লোরিক এসিডও মিশ্রিত হয়। এসব এসিড ও তরল হজমের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ তারা খাবারকে ভেঙে শক্তিতে রুপান্তরিত করে। তাই পানি খাওয়া উচিত খাবারে আধা ঘন্টা আগে কিংবা দেড় বা ২ ঘন্টা পরে। যদি কখনো খাবার পরপরই পানি খাওয়ার জরুরি হয়ে পড়ে যেমন ওষুধ সেবন, তাহলে অবশ্যই উষ্ণ পানি পান করবেন।

খাওয়ার পরপরই কোনো অবস্থাতেই গোসল করা যাবে না। কারণ হজেমের পাকস্থলীতে শক্তি ও রক্তের প্রবাহ দরকার। খাওয়ার পরপরই গোসল করলে শরীরের তাপমাত্রা কমে যাওয়ায় হজম প্রক্রিয়া শ্লথ হয়ে যায়। গোসলের কারণে ত্বকের ঠিক নিচে রক্ত প্রবাহ কমে যায় ঠান্ডা পানির প্রভাবে। হজম প্রক্রিয়া ব্যাহত হওয়া থেকে রক্ষা পেতে খাওয়ার আগে কিংবা খাওয়ার অন্তত ১ ঘন্টা পরে গোসল করা উচিত।

খাওয়ার পরপরই ঘুমানো বা বসে পড়া হজমের জন্য ক্ষতিকর। খাওয়ার সাথে সাথেই ঘুমালে হজম প্রক্রিয়া বিঘ্ন হওয়ার পাশাপাশি অস্বস্তি ও খারাপ লাগা কাজ করতে পারে। ডিনারের কমপক্ষে ২ ঘন্টা পরে ঘুমানো উচিত। এমনকি লাঞ্চের পরে অন্তত ১০০ কদম হাঁটা দরকার।

স্বাভাবিক হজম প্রক্রিয়া ও সুস্থতার জন্য অবশ্যই খাওয়ার পরে অস্বাস্থ্যকর অভ্যাসগুলো পরিহার করে উপকারী কিছু বিষয় মেনে চলা জরুরি। পাশাপাশি মানসিক সুস্থতা জরুরি।

কিছু করণীয়
সর্বদা আরামদায়ক পোশাক পরিধান করতে হবে। টাইট পোশাক পরা যাবে না। তলপেটে টাইট পোশাকের কারণে সর্বদা এসিডিটি বেড়ে যায়। আরামদায়ক পোশাক হজম ও ভালো ঘুমের জন্য সহায়ক।

লাঞ্চের পরে বজ্রাসনে তথা পা ভাজ করে মেরুদণ্ড সোজা করে কিছু সময় বসা, যা হজমের সহায়তার পাশাপাশি বেশি খাওয়া থেকে রক্ষা করে।

খাওয়ার পরে মন শান্ত রাখুন, আরামদায়ক পজিশনে বসুন, চোখ বন্ধ রাখুন, ভালো কিছু শুনুন। শুনতে থাকুন অন্য কিছু চিন্তায় না এনে। শান্ত থাকুন।

কিছু সময় রিলাক্স মুডে পার করার পরেকয়েক মিনিট চিৎ হয়ে শান্তভাবে শুয়ে থাকুন। এটি হজম ও শক্তির জন্য উপকারী।

এরপরে খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে খাওয়ার সময় মোবাইল ফোন ব্যবহার কিংবা টিভি দেখা একেবারে বর্জন করুন। শান্তভাবে এবং নীরবে পুরো খাওয়া সম্পূর্ণ করুন। মহান আল্লাহর নেয়ামত মনে করে সন্তুষ্টচিত্তে খান।

Leave a Comment