
জয়ের পর তারা সেজদায় মাথা নামিয়েছেন, নিজেদের সৃষ্টিকর্তার কাছে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন এভাবেই।
ফুটবল বিশ্বকাপ সরাসরি দেখার লিঙ্ক
https://toffeelive.com/#video/36a828a74c6b885ba29eab98e118168c33
পর্তুগাল, স্পেন, বেলজিয়ামকে হারানো মরক্কোকে কেন ‘সবাই ভালোবাসে’
ফিফা বিশ্বকাপে আফ্রিকার তিনটি দেশ এখনও পর্যন্ত কোয়ার্টার ফাইনাল খেললেও সেমিতে কোন দেশ যেতে পারেনি। কিন্তু এবারই প্রথম ইতিহাসের পাতায় নতুন অধ্যায় যোগ করেছে মরক্কো। মরক্কোর তাদের দুর্দান্ত নৈপূণ্য দেখিয়ে বিশ্বকাপের এবারের বিশ্বকাপ রাঙিয়ে তুলেছে নতুন রঙে।
কাতারে খেলা দেখতে আসা বিভিন্ন দেশে দর্শকরা, যারা বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে অভিবাসী হিসেবে থাকছেন এবং মরক্কোর পথেঘাটে বড় উৎসবে শামিল হয়েছেন যারা, সবাই যেন এই বিশ্বকাপে মরক্কোর জন্য বড় শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন।
এই সমর্থনের প্রতিদান দিয়েছেন মরক্কোর ফুটবলাররা। মহাদেশের প্রথম দেশ হিসেবে ফিফা বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে পা রেখেছে মরক্কো। এখান থেকে আর মাত্র দুটি ম্যাচে জয় বিশ্বকাপ ইতিহাসের সবচেয়ে বড় অঘটনের জন্ম দিতে পারে।
অবশ্য অনেকেই মরক্কোর জয়কে অঘটন বলতে নারাজ। যে দল বেলজিয়ামকে হারিয়েছে, ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে ড্র করেছে, স্পেনকে হারিয়েছে, পর্তুগালকে ৯০ মিনিটের খেলায় হারিয়েছে। তাদের জয়কে অঘটন বলার উপায় নেই, কিন্তু ফুটবল বিশ্লেষকদের মধ্যে অনেকেই মরক্কোর কথা তেমনভাবে বলেননি।
এমনকি বেলজিয়াম ক্রোয়েশিয়ার গ্রুপে থাকায় মরক্কো যে দ্বিতীয় রাউন্ডে যাবে সেটাই কল্পনা করেননি অনেকে। সেই মরক্কো এখন কাতার বিশ্বকাপের শেষ চারটি দলের একটি, বলা যায় বিশ্বসেরা চারটি দলের একটি।
ম্যাচ দেখে তারকা গায়িকা শাকিরা টুইটারে নিজের বিখ্যাত বিশ্বকাপের গানের একটি লাইন টুইট করেন, “দিস টাইম ফর আফ্রিকা”।
ইউসেফ এন নেসিরির দুর্দান্ত এক হেডে মরক্কো পর্তুগালকে ১-০ গোলে পরাস্ত করেছিল কোয়ার্টার ফাইনালে।
মরক্কোর কোচ ওয়ালিদ রাগরাগি ম্যাচ শেষে বলেন, মরক্কো এমন এক দল হয়ে উঠেছে যাদের সবাই ভালোবাসে।
“আমরা দেখিয়েছি আমরা কী করতে পারি।”
রাগরাগির মতে, মরক্কো এমন এক দল হয়ে উঠেছে যারা নিজেদের দৃঢ়তা, হৃদয়ের আকাঙ্খা ও বিশ্বাসকে মাঠে প্রতিফলিত করতে পেরেছে।
“এখন আর এটা অলৌকিক কিছু নয়, ইউরোপে অনেকে বলতে পারে এটা অলৌকিক কিন্তু আমরা পর্তুগাল, স্পেন, বেলজিয়ামকে হারিয়েছি, ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে ড্র করেছি কোনও গোল হজম না করে”।
মরক্কোর গর্বিত এই কোচ আরো বলেন, আফ্রিকা ও আরবে দলগুলো অনেক পরিশ্রম করে কিন্তু এবারে তারা গোটা একটি মহাদেশকে অনুপ্রাণিত করতে পেরেছে।
বিশ্বকাপে মুসলিমদের প্রতিনিধিত্ব করছে মরক্কো
তারিক বিন যিয়াদের মরক্কো জয়ে জেরুজালেমে হয়েছে উৎসব। ফিলিস্তিনিরা মরক্কোকে সমর্থন দিয়েছে, দিয়েছে আরব বিশ্ব। আরব বিশ্বে অনেকেই মনে করছেন এই জয়, ‘একটা জবাব’। মরক্কোর কোচও অনেকটা সেই সুরে কথা বলেছেন। তিনি মনে করেন, ইউরোপের অনেকে মরক্কোর এই জয়কে অঘটন আখ্যা দিতে চাইবে। কিন্তু এখন আর এটাকে ‘অঘটন’ মানতে নারাজ তিনি।
ফেসবুকে বাংলাদেশী তরুণ মঈনুল রাকীব লিখেছেন,
মরক্কো বৈশ্বিক দক্ষিণপাড়ার একমাত্র পক্ষ। নিপীড়িত ফিলিস্তিনের মুক্তির পতাকা উড়ানোর জন্য হলেও তাদের ভালো লাগে।
বিবিসি রেডিও ফাইভ লাইভে স্কটল্যান্ডের সাবেক ফুটবলার প্যাট নেভিন বলেন, “স্টেডিয়ামের যে আওয়াজ এটা অনন্য। এটা তাদের অর্জন। শুধু ফুটবলের দক্ষতা ও চেষ্টা নয়, মাঠের এই আওয়াজও গোটা বিষয়টার মাহাত্ম্য বাড়িয়ে দিয়েছে।”
মরক্কো কেবলই প্রথম আফ্রিকান দেশ হিসেবে নয়, প্রথম আরব দেশ হিসেবেও সেমিফাইনালে জায়গা করে নিয়েছে। মরক্কোর বেশিরভাগ মানুষই মুসলিম। মাঠে মরক্কোর ফুটবলাররা নিজেদের ইসলামিক বিশ্বাস প্রদর্শন করেছেন।
স্পেনের বিপক্ষে পেনাল্টি শুটআউটের আগে ইসলামের পবিত্র গ্রন্থ হিসেবে পরিচিত কোরান থেকে আয়াত পড়েছিলেন তারা।
পর্তুগালের বিপক্ষে জয়ের পর তারা সেজদায় মাথা নামিয়েছেন, নিজেদের সৃষ্টিকর্তার কাছে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন।
আশরাফ দারি ফিলিস্তিনের পতাকা গায়ে জড়িয়ে মাঠে সমর্থন প্রকাশ করেছেন।
আশরাফ হাকিমি আবারও জয়ের পরে মায়ের কাছে গ্যালারিতে ছুটে গিয়েছেন, সোফিয়ান বৌফল তার মায়ের সাথে নাচেন।
কোচ রাগরাগি সবার শেষে মাঠ ছাড়েন, আবেগ আর উল্লাস তাকে ছুঁয়ে গিয়েছিল।
ম্যাচের পর সংবাদ সম্মেলনে তিনি কথা শুরু করেন, সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ জানিয়ে।
“আলহামদুলিল্লাহ”।
ইসলামিক স্কলার ওমর সুলাইমান লিখেছেন, মাশাআল্লাহ মরক্কো আফ্রিকাকে গর্বিত করেছে! ফিলিস্তিনকে গর্বিত করেছে! মুসলমানদের গর্বিত করেছে! আমাদের সকলকে গর্বিত করে!
আল হামদুলিল্লাহ!