মানসিক রোগ কেন হয় এবং কিভাবে সারাবেন?

মানসিক স্বাস্থ্য

মানসিক স্বাস্থ্য

মানসিক স্বাস্থ্য নির্ভর করে সার্বিক সুস্থতার ওপরে। মানসিক সমস্যার শুরু হয় অতিরিক্ত স্ট্রেস থেকে। শরীরের হরমোনের ভারসাম্য না থাকলে তার হেরফের ঘটবে। আর হরমোনের ভারসাম্যহীনতা তৈরি হয় লাইফস্টাইল এলোমেলো হলে। তাছাড়া জেনেটিক্যাল কারণে এ সমস্যা হতে পারে।

মানসিক স্বাস্থ্য এত বিস্তৃত যে, এর সুনির্দিষ্ট সজ্ঞায়ন সম্ভব নয়। কারো স্ট্রেস বা হরমোনের ভারসাম্যহীনতা হলে ঘুম ভালো হবে না। ঘুম ভালো না হলে, দিনটা ভালো যাবে না। দিন ভালো না গেলে রাতটা ভালো কাটবে না। এটি একটা চক্রের মত। তাছাড়া আমাদের জীবনযাপনের কারণেও সমস্যা হতে পারে। যেমন অনেকেরই সুর্যের আলোতে যাওয়া সুযোগ নাই। ইউরোপে অনেক দেশেই সুর্যের আলো পাওয়া যায় না।

যেমন, একটি গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব এরিয়াতে সুর্যের আলো কম আসে, সেসব স্থানে করোনায় আক্রান্তের হার বেশি ছিল। সুর্যের আলোর স্বল্পতার কারণে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হওয়ায় কোভিডের আক্রমন বেশি হয়েছে। তাছাড়া জেনেটিক সমস্যা থাকলে তার সন্তানদের ওপর মানসিক প্রভাবটা স্বাভাবিকভাবেই বেশি পড়বে।

এছাড়াও লাইফস্টাইল ভালো না হলে, মানসিক সমস্যা হয়। খাবার ভালো না হলে, ঘুম ভালো না হলে, চিন্তা সুন্দর না হলে চাপ তৈরি হয়। আর স্ট্রেসের কারণে নানা রকমের শারীরিক ও মানসিক সমস্যা হয়ে থাকে। সকল ধরণের রোগের মূলে রয়েছে স্ট্রেস। প্রতিটি রোগের পেছনে স্ট্রেসের হাত রয়েছে।

এখন স্ট্রেস থেকে বের হয়ে আসার জন্য যারা যত্নবান হচ্ছেন না, পরবর্তীতে তারা নানা রোগে আক্রান্ত হবে। খাবার-দাবার অনেক গুরুত্বপূর্ণ। তারচেয়েও গুরুত্বপূর্ণ মানসিকতা। প্রথমত চিন্তার প্রক্রিয়াকে পরিবর্তন করতে হবে। মূলত কেউ পরিপূর্ণ নন। কেউ যদি নিজেকে পুরো পার্ফেক্ট মনে করেন, তাহলে বুঝতে হবে সে আসলেই ইমপার্ফেক্ট। কখনো পার্ফেক্ট হওয়ার চেষ্টা করবেন না। নিজের সর্বোচ্চ উৎকর্ষ সাধনের চেষ্টা করবেন বিশ্বের জন্য। আল্লাহর জন্য বাঁচার চেষ্টা করুন।

নিজের জীবনের চাপ কমানোর জন্য কখনো এটা পেলাম না, ওটা পেলাম না- এরকম অপ্রাপ্তি নিয়ে ভাববেন না। বরং জীবনের প্রাপ্তিগুলো নিয়ে সন্তুষ্ট থাকবেন না। সবকিছুকে মহান আল্লাহর দয়া মনে করবেন।

কারো বিষয়ে খারাপ চিন্তা আসলে মনে করবেন সেটি সঠিক নয়। ভাবুন সে মানুষটি হতে পারে আপনার চেয়ে ভালো। নিজেকে সব সময় বিনয়ী রাখুন।

মনে রাখতে হবে জীবনটা ক্ষণস্থায়ী। এই জীবনের কোনো সমস্যাকে স্থায়ী ভাববেন না। এই জীবনে সেরাটা করা চেষ্টা করতে হবে।

মানসিক চাপ কমাতে নিজের ভালো অর্জনগুলো সামনে আনুন। হাজারো খারাপ থাকতে পারে, তবে সেগুলো সামনে না এনে ভালোগুলো চিন্তা করুন। আপনার ভালো সঙ্গী আছে, ভালো সন্তান আছে, ভালো পিতামাতা আছে কিংবা ভালো বন্ধু আছে, আপনি ভালো ঘুমাতে পারেন, আপনার ভালো সমাজ আছে।

কেউ নিজেকে যেরুপ চিন্তা করবে, সে সেরুপই করতে পারবে। যেমন, যদি মনে করে তাকে দিয়ে কিছু হবে না, তাহলে তাই। আর যদি মনে করে আমি ভালো কিছু করতে পারব, তাহলে আসলেই সে পারবে।

মানসিক চাপ থেকে বের হতে না পারলে আপনার হরমোন ঠিক থাকবে না। স্ট্রেস থেকে বের হয়ে আসার একটা বড় উপায় হচ্ছে, আপনার খাবারকে ঠিক/নির্দিষ্ট করুন। খাবারে ব্যাকটেরিয়ার খাবার দিন, যেমন পিয়াজ, রসুন, সব ধরনের সবুজ, ফাইবার, এবং ব্যাকটেরিয়াও দিন, যেমন অ্যাপেল সিডার ভিনেগার, দই, খিমসি। সুষম খাবার খেতে হবে। কোনো প্রসেস ফুড খাওয়া যাবে না। কম শর্করা ও কম প্রোটিন এবং বেশি শাকসবজি ও ফ্যাট খেতে হবে। কুসুমসহ ডিম, মাংস, সাগরের মাছ খান। যার যেসব খাবারে এলার্জি, সেগুলো খাবেন না। পর্যাপ্ত ভিটামিন শরীরে যেন থাকে।

শরীরের হরমোনের ভারসাম্য নিশ্চিত করতে হবে। ডায়াবেটিস, স্থুলতা কিংবা ক্যান্সার থাকলে সুগারযুক্ত শর্করা পরিহার করতে হবে।

পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করতে হবে। সূর্যের আলোতে যেতে হবে। নিয়মিত শরীরচর্চা করতে হবে। খালি পায়ে হাঁটা জরুরি।

 

 

Leave a Comment