
ডাঃ মুজিবুর রহমান
সুস্থতা ফিরে পেতে অ্যালকালাইন মিনারেলসমৃদ্ধ খাবার খাবেন যে কারণে
সুস্থতার জন্য আমাদের অ্যালকালাইন মিনারেলসমৃদ্ধ খাবার অত্যন্ত প্রয়োজন। বিশেষ করে চারটি ভাইটাল মিনারেল আইটেম আমাদের শরীরের জন্য দরকার। সেগুলো হলো- সেডিয়াম, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও ক্যালসিয়াম। আরো অনেকগুলো রয়েছে, সেগুলোর মধ্যে জিন্ক, কপার, ম্যাংগানিস, আয়রনও অ্যালকালাইন মিনারেল সমৃদ্ধ।
খাবারকে রাসায়নিকভাবে বিশ্লষণ করলে ৪টি উপাদান পাওয়া যায়। যথা- অক্সিজেন (ও), নাইট্রোজেন (এন), কার্বন (সি) এবং হাইড্রোজেন (এইচ)। অর্থাৎ HCNO. এই ৪টি উপাদান দিয়ে সব খাবার তৈরি হয়। কিন্তু নাইট্রোজেন (এন) শর্করা জাতীয় খাবারের মধ্যে নেই। নাইট্রোজেন রয়েছে প্রোটিনের মধ্যে। অর্থাৎ আমরা কার্বোহাইড্রেড, প্রোটিন কিংবা ফ্যাটসহ যেসব খাবার খাচ্ছি তা এই চারটি উপাদানের সমন্বয়ে তৈরি হয়। আর এই ৪টি উপাদানের সাথে অন্যান্য ইন-অর্গানিক মিনারেল খাবারে যুক্ত হয়। তবে সেগুলোর পরিমাণ মাত্র ৩ শতাংশ। ৯৭ শতাংশ হলো HCNO।
আমরা অর্গানিক, ইন-অর্গানিক কিংবা অ্যালকালাইন মিনারেলসহ যত খাবার খাই প্রতিটি খাবারে সালফার, ফসফরাস, অক্সিজেন (ও), নাইট্রোজেন (এন), কার্বন (সি) এবং হাইড্রোজেন (এইচ) রয়েছে। এতে করে আমাদের শরীরে অনেক অর্গানিক ও ইন-অর্গানিক এসিড তৈরি হয়। অর্গানিক এসিডগুলো হলো ল্যাকটিক এসিড, অ্যাসিটিক এসিড, ইউরিক এসিড, বিভিন্ন রকমের ফ্যাটি এসিড, অ্যামোনিয়া, কোলেস্টরেল, কার্বনিক এসিড।
ইন অর্গানিক এসিড হলো সালফিউরিক এসিড, ফসফরিক এসিড, হাইড্রোক্লোরিক এসিড। খাবার উপাদানসমূহ বিশ্লেষিত হয়ে নানা রকমের এসিড তৈরি হয়। এখন এসমস্ত এসিডসমূহ যদি পুষ্টিতে রুপান্তরিত না করা যায় তাহলে আমাদের অর্গানগুলো পুরে যাওয়ার কথা। কিন্তু পুরে না যাওয়ার কারণ এসিডসমূহকে পুষ্টিতে রুপান্তরিত করার মতো আমাদের শরীরের মধ্যে থাকা ম্যাকানিজম, যাকে এসিড বাফারিং সিস্টেম বলে।
তারমানে এসব এসিডকে পুষ্টিতে রুপান্তরিত করে দূর্বল এসিডে পরিনত করে শরীর থেকে বের করতে হবে। কার্বনিক এসিড কার্বনড্রাই অক্সাইড হিসেবেবের হয়ে যাবে। বাকী সালফিউরিক এসিড, ফসফরিক এসিড, হাইড্রোক্লোরিক এসিড নিউট্রলাইজ হয়ে প্রসাবের মাধ্যমে শরীর থেকে বের হয়ে যাবে নিউট্রাল সল্ট হিসেবে। প্রিনিউট্রলাইজিং ফ্যাক্টরগুলো হলো দেহ যেগুলো তৈরি করে সোডিয়াম বাই কার্বনেট, ক্যালসিয়াম কার্বনেট, পটাশিয়াম কার্বনেট, ম্যাগনেসিয়াম কার্বনেট, এমোনিয়া। এখন এই এসিডগুলোর সাথে যদি নিউট্রলাইজিং ফ্যাক্টরগুলো সোডিয়াম বাই কার্বনেট, ক্যালসিয়াম কার্বনেট, পটাশিয়াম কার্বনেট, ম্যাগনেসিয়াম কার্বনেট, এমোনিয়া তৈরি হয়, তাহলে নিউট্রল সল্ট প্রসাবের মাধ্যমে, ঘামের মাধ্যমে, নিশ্বাসের মাধ্যমে শরীর থেকে বের হয়ে যাবে।
যখনই খাবারে এসব মিনারেলের ঘাটতি দেখা দিবে, তখনই শরীরে এসিডিক প্রোডাক্ট জমতে থাকবে। এ থেকে পরিত্রান পেতে আমাদের শরীরে অ্যালকালাইন মিনারেল প্রবেশ করাতে হবে। এটি সম্ভব কেবল অ্যালকালাইন মিনারেল সমৃদ্ধ পানি ও খাবারের মাধ্যমে। যেসব খাবারে এসব মিনারেল রয়েছে, তাদেরকে অ্যালকালাইন মিনারেল ফুড বলে। অ্যালকালাইন মিনারেল ফুডের মধ্যে রয়েছে সমস্ত শাকসবজি, সমস্ত ফলমুল, সি ভেজিটেবলস, সি হুইট, বাদাম, কিছু সিডস, নারিকেল তেল, আপেল সিডার ভিনেগার।
শরীরকে রোগমুক্ত রাখতে হলে অ্যালকালাইন মিনারেল ফুড লাগবে। দেহের ph ঠিক না থাকলে অর্থাৎ ph ৭.৩৮ থেকে ৭.৪ যদি না থাকে শরীর অসুস্থ হবে। এজন্য দুটো কাজ করতে হবে। এক, শরীরে জমে থাকা এসিডিক বর্জ্য অপসারণ করতে হবে। দুই, পর্যাপ্ত অ্যালকালাইন মিনারেল ফুড খেতে হবে। তাছাড়া সুস্থ হওয়ার অন্য কোন পথ নেই।